মিল্কশেকের উপকারিতা ও অপকারিতা
মিল্কশেক আমাদের সকলের পছন্দের একটি পানীয়। বিশেষত গরম আবহাওয়ায় একগ্লাস ঠান্ডা মিল্কশেক আমাদের শরীর ও মনকে চূড়ান্ত প্রশান্তি এনে দিতে পারে। কিন্তু আপনি কিসে চুমুক দিচ্ছেন তা নিয়ে ভেবেছেন কখনও? মিল্কশেক কি শুধুই একটি সুস্বাদু ডেজার্ট? নাকি এর সুস্বাদু হওয়ার পিছনে কোনো লুকানো ঝুকি আছে? আসুন এর সুবিধা ও সম্ভাব্য ক্ষতির আলোচনায় ডুব দেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্র:
মিল্কশেক কি?
মিল্কশেক সাধারনত ক্রিমি, মিষ্টি পানীয় যা দুধ, আইসক্রীম এবং ফল, ভ্যানিলা
ফ্লেভার বা চকলেট ফ্লেভারের মিশ্রনে তৈরী হয়। সাধারনত মিল্কশেক ঠান্ডা পরিবেশন
করা হয়। কখনো কখনো মিল্কশেক পরিবেশনের আগে এর উপর বিভিন্ন রকম ক্রীম,
বাদামকুচি, শুকনো ফলের কুচি ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয়। আমাদের দেশে সাধারনত
বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, কফিসপ এবং ফুডকোর্ট গুলোতে মিল্কশেক পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ
অরিও মিল্কশেক বানিয়ে নিন ঝটপট!
মিল্কশেকের উপাদান সমূহ:
মিল্কশেকের প্রধান উপাদান সমূহ নিম্নরুপ:
- বেসিক উপাদান: মিল্কশেকের প্রধানতম উপাদান গুলো হল:
- আইসক্রীম: এটি মিল্কশেকের প্রধান উপাদান, যা মিল্কশেককে ক্রিমি আর মিষ্টি করে। চকলেট, ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি সহ বিভিন্ন ফ্লেভারের আইসক্রীম মিল্কশেকে ব্যাবহৃত হয়।
- দুধ: মিল্কশেককে সঠিক ঘনত্বে আনার জন্য দুধ ব্যাবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের (যেমন: বাদাম দুধ, মালাই দুধ ) দুধ ব্যাবহার করা হয় মিল্কশেকে।
- ফ্লেভার: মিল্কশেকে ফ্লেভার আনার জন্য বিভিন্ন সিরাপ (যেমন: চকলেট সিরাপ, ক্যারামেল সিরাপ, স্ট্রবেরি সিরাপ) কিংবা ফল (যেমন: কলা, আম, স্ট্রবেরি) অথবা পিনাট বাটার বা বিস্কুট ব্যাবহার করা হয়।
- মিষ্টিদ্রব্য: রেসিপি এবং ব্যক্তিগত টেস্টের উপর ভিত্তি করে আলাদা করে মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য যেমন: চিনি, খেজুর বা বিভিন্ন সিরাপ ব্যাবহার করা হয়।
- অন্যান্য: মিল্কশেক সার্ভ করার সময় সৌন্দর্য ও স্বাদ বৃদ্ধিতে উপরে হুইপড ক্রিম, বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুট কুচি ছড়িয়ে সার্ভ করা হয়।
মিল্কশেকের প্রকারভেদ:
মিল্কশেক বিভিন্নধরনের হতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় কয়েকটি
হল:
- ভ্যানিলা মিল্কশেক: এটি ভ্যানিলা আইসক্রীম, দুধ এবং ভ্যানিলা ফ্লেভারের মিশ্রনে তৈরী হয়।
- চকলেট মিল্কশেক: এটি চকলেট আইসক্রীম, দুধ, চকলেট সিরাপ বা কোকো পাউডারের মিশ্রনে তৈরী হয়।
- স্ট্রবেরি মিল্কশেক: এটি স্ট্রবেরি ফ্লেভারযুক্ত আইসক্রীম, দুধ, স্ট্রবেরি, স্ট্রবেরি ফ্লেভার এসবের মিশ্রনে তৈরী হয়।
- পিনাট বাটার মিল্কশেক: এটি পিনাট বাটার, বাদাম ফ্লেভারযুক্ত আইসক্রীম এবং দুধের মিশ্রনে তৈরী হয়।
- ব্যানানা মিল্কশেক: এটি কলা, ব্যানানা ফ্লেভারের আইসক্রীম, দুধ বা দই এর মিশ্রনে তৈরী হয়।
- ম্যাংগো মিল্কশেক: এটি পাকা আমের জুস, ম্যাংগোফ্লেভার আইসক্রীম, দুধের মিশ্রনে তৈরী হয়।
- সল্টেড ক্যারামেল মিল্কশেক: এটি ক্যারামেল সস, আইসক্রীম, দুধ ও সামান্য লবনের মিশ্রনে তৈরী হয়।
- ওরিও মিল্কশেক: এটি সাধারনত ওরিও বিস্কুটের গুড়া, আইসক্রীম, দুধ এবং কখনো কখনো চকলেট সিরাপের মিশ্রনে তৈরী হয়।
এগুলো ছাড়াও আপনি আপনার নিজের সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে বিভিন্ন ফ্লেবার এবং
ফলের জুসের মিশ্রনে আরও বিভিন্ন রকম মিল্কশেক তৈরী করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ গরমে পান করুন টেন্ডার কোকোনাটের মজাদার মিল্কশেক
মিল্কশেকের উপকারিতা:
তৈরীর উপাদানের উপর ভিত্তি করে মিল্কশেক গ্রহনের অনেক উপকারীতা রয়েছে।
এখানে মিল্কশেক গ্রহনের কিছু প্রধানতম উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
- ওজন বৃদ্ধি: যারা স্বাস্থকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাদের জন্য মিল্কশেক গ্রহন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। মিল্কশেক অনেক উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার হওয়ায় এটি দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- হাড়ের ও দাতের যত্নে: দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য দ্বারা তৈরী মিল্কশেক গুলো ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উতস যা স্বাস্থকর হাড় ও দাঁত গঠনে বিষেশ ভূমিকা পালন করে।
- পুষ্টি উপাদান: মিল্কশেক আমাদের শরীরের জন্য জরুরী প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে পারে যদি এদি স্বাস্থকর দুধ বা দুগ্ধজাত বিকল্প, ফল এবং অন্যান্য পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ উপাদান দ্বারা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
- রোগ প্ররিরোধ: ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই যুক্ত ফল দ্বারা তৈরী মিল্কশেক গুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি: দই বা প্রবায়োটিক উপাদান দ্বারা তৈরী মিল্কশেক গুলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া সরবরাহের মাধ্যমে হজমের উপকার করে থাকে।
- ইন্সট্যান্ট পাওয়ার ও এক্সারসাইজ বুস্টার: মিল্কশেক বিষেশত সেই সব মিল্কশেক যেগুলো বিভিন্ন ফল ও পিনাট বাটার দিয়ে তৈরী সেগুলো তাদের কার্বহাইড্রেট উপাদানের জন্য এনার্জির ভালো উতস হিসাবে কাজ করে যা অ্যাথলেট কিংবা রেগুলার জীম করা ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।
- হার্টের স্বাস্থে: তৈরীর উপাদানের (যেমন: অ্যাভোক্যাডো, বাদাম) উপর ভিত্তি করে মিল্কশেকে উপকারী ফ্যাট থাকে যা হার্টের স্বাস্থ ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
- চুলের উপকার: মিল্কশেক যেসব উপাদানে তৈরী (যেমন: আলমন্ড/কাঠবাদাম) তাতে সাধারনত এমন সব ভিটামিন আর মিনারেল থাকে যা চুলের স্বাস্থ ভালো রাখে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে: বিভিন্ন বেলার খাবারের পরিবর্তে কাস্টমাইজড করে তৈরী মিল্কশেক গ্রহনের মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব।
- ক্লোরেস্টেরল নিয়ন্ত্রন: হার্টের জন্য উপকারী ফ্যাট, ফাইবার, লো ফ্যাটযুক্ত দুধ বা উদ্ভিজ্জ দুধের দ্বারা তৈরী মিল্কশেক রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- ত্বকের স্বাস্থ: মিল্কশেকে থাকা দই এবং বাদামের মত উপাদানগুলো এদের প্রবায়োটিক এবং ভিটামিন জাতীয় উপাদানের জন্য ত্বকের স্বাস্থ রক্ষায় ভালো অবদান রাখতে পারে।
- মাসেল রিকভারি: দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং বাদাম সমৃদ্ধ মিল্কশেকে প্রোটিন থাকে যা পেশী রিপেয়ার ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- স্ট্রোকের ঝুকি কমায়: মিল্কশেকে থাকা পুষ্টিগুন সম্পন উপাদান গুলো রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন এবং হার্টের স্বাস্থ ভালো রাখার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুকি কমায়।
- মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: মিল্কশেকে থাকা বিভিন্ন রকম বাদাম এবং বীজ জাতীয় উপাদানগুলোতে স্বাস্থকর চর্বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত উপাদান থাকায় তা মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ সাবধান!!! দুধের সাথে এই খাবার খেলেই বিপদ।
মিল্কশেকের অপকারিতা সমূহ:
সাধারনত অতিরিক্ত মিল্কশেক গ্রহন এবং মিল্কশেকে অস্বাস্থকর উপাদান ব্যাবহারের
কারনে মিল্কশেক গ্রহন ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। এখানে মিল্কশেকের কিছু
ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হল:
- ডায়বেটিস এর ঝুকি: বেশীরভাগ মিল্কশেকে বেশী পরিমানে চিনি ব্যাবহার করা হয়, যা রক্তে সুগার লেভেল বাড়ায়। এতে টাইপ-২ ডায়বেটিস হওয়ার ঝুকি অনেক বেড়ে যায়।
- ওজন বৃদ্ধি: মিল্কশেকে চিনি এবং উচ্চ ক্যালরি যুক্ত উপাদান ব্যাবহার করায়, বেশী ওজন বৃদ্ধির কারনে স্থূলতা জনিত সমস্যা হতে পারে।
- হার্টের সমস্যা: অতিরিক্ত মিল্কশেক গ্রহনে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমান বেড়ে যেয়ে হার্টের রোগ দেখা দিতে পারে।
- ল্যাকটোজ সমস্যা: যাদের ল্যাকটোজ হজমে সমস্যা তারা মিল্কশেক গ্রহন করলে পেটে গ্যাস, পেট ফাপা, এবং হজম জনিত সমস্যায় পড়তে পারেন।
- দাঁতের সমস্যা: মিল্কশেকে থাকা চিনি ক্যাভিটি সহ অন্যান্য দাঁতের সমস্যা তৈরী করতে পারে।
- ফ্যাটি লিভার: অতিরিক্ত চর্বি এবং চিনি গ্রহনের ফলে লিভারে চর্বি জমে ফ্যাটিলিভার দেখা দিতে পারে।
- পুষ্টিহীনতা: অনেকে শুধু মাত্র মজার জন্য বিভিন্ন বেলার খাবারের পরিবর্তে মিল্কশেক খেয়ে থাকে। এর ফলে তাদের শরীরে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
- অনিদ্রা: অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন থেকে ওজন বৃদ্ধি হলে তা অনিদ্রা রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
- হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক: অতিরিক্ত মিল্কশেক গ্রহন কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
অপকারিতা এড়িয়ে মিল্কশেক থেকে যেভাবে উপকার পাওয়া সম্ভভ:
নিম্নোক্ত ধাপ সমূহ অনুসরন করে মিল্কশেক তৈরী করলে আমরা অপকারিতাগুলো এড়িয়ে
মিল্কশেক থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া সম্ভব।
- ফ্রেস ফলমূল যেমন: কলা, স্ট্রবেরি, আম এগুলো ব্যাবহার করা।
- আলমন্ড অথবা পিনাট বাটার ব্যাবহার করা।
- মিষ্টি দই না ব্যাবহার করে টক দই ব্যাবহার করা।
- লো-ফ্যাট মিল্ক, আলমন্ড মিল্ক, উদ্ভিজ্জ মিল্ক ব্যাবহার করা।
- চিনি এবং সিরাপ না ব্যাবহার করা।
- মিষ্টি করার জন্য রিফাইন চিনির পরিবর্তে ন্যাচারাল মিষ্টিজাত দ্রব্য যেমন: মধু, খেজুর, ম্যাপল সিরাপ ব্যাবহার করা।
- ব্যালান্স করার জন্য প্রোটিন পাউডার ব্যাবহার করা যেতে পারে।
- চিয়া সীড ব্যাবহার করলে খুব উচ্চ মানের ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ মিল্কশেক তৈরী করা সম্ভব।
- সবকিছু ব্যালান্স করে সঠিক উপাদান দ্বারা তৈরী হলে তবেই খাবারের পরিবর্তে খাওয়া উচিত।
- প্রসেক করা জিনিস যেমন হুইপড ক্রিম, চকলেট সিরাপ এগুলা ব্যাবহার না করা।
- ফাইবার যুক্ত খাবার (যেমন: ওর্টজ) মিশানো যেতে পারে।
শেষকথা:
আমাদের দেশের অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট যেহেতু মানস্মত এবং স্বাস্থকর খাবার পরিবেশন
করে না সুতরাং রেস্টুরেন্টএ না খেয়ে বাসায় মিল্কশেক বানিয়ে খাওয়াই ভালো।
একান্তই
বাইরে খেতে হলে মানসম্মত রেস্টুরেন্টেই খাওয়া উচিত। স্বাস্থকর,
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরী হলে এবং পরিমিত পরিমানে খেলে মিল্কশেক উপকারী এবং
উপভোগ্য হতে পারে। তাজা ফলমূল যুক্ত করে, লো-ফ্যাট দুধ ব্যাবহার করে এবং
শর্করার পরিমান কমিয়ে আপনি মিল্কশেককে একটি পুষ্টিকর খাবারে পরিনত করতে
পারেন।
[বি. দ্র: অতিরিক্ত সব কিছুই কুফল বয়ে আনে।]
Quick Tips 24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url